শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজের তিন দিনের স্বাস্থ্য সম্মলনে কি অন্য কোনও পথ দেখাল?

 বোলপুর, ৩ মার্চ : ২০২৭ সালের মধ্যে সরকারের সহযোগিতায় ও সহমত ভিত্তিতে স্থান নির্বাচন করে গড়ে উঠবে “শান্তিনিকেতন স্বাস্থ্য উপনগরী।” আজ, রবিবার সকালে শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ ও ক্যাম্পাসে সেই পরিকল্পনার শিলান্যাস করলেন দেশের প্রখ্যাত রেডিওলজিষ্ট প্রফেসর ডাঃ কে প্রভাকর রেড্ডি ও এশিয়ার বিখ্যাত লিভার রোগ ও লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুরেশ সিংভি।

উপস্থিত ছিলেন শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সভাপতি মলয় পীট, মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডাঃ গৌতম নারায়ণ সরকার সহ আরও বহু বিশিষ্টজন। 

উদ্বোধনী ভাষণে আগামীদিনে নতুন কিছু করে সামাজিক উন্নয়নে সামিল হতে যুব সমাজকে আহবান জানিয়ে, ছাত্রছাত্রীদের চারটি "ডি (D)" মনে রাখার পরামর্শ দিলেন দেশের প্রখ্যাত রেডিওলজিস্ট প্রফেসর ডাঃ কে প্রভাকর রেড্ডি।

আজ শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজে অনুষ্ঠিত হওয়া SMC MedExpo 2025, ছাত্রছাত্রীদের জন্য বাৎসরিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ESTELLA 2K25 মঞ্চে প্রস্তাবিত “শান্তিনিকেতন স্বাস্থ্য উপনগরী” শিলান্যাস এর এক  অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের চারটি ডি-কে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। 

ডাঃ রেড্ডি বলেন, “ডিসিশন, ডিটারমিনেশন, ডেডিকেশন এবং ডিসিপ্লিন – এই চারটি ডি-কে সামনে রেখে ছাত্রছাত্রীদের এগিয়ে যাওয়া উচিত। এতে করেই সাফল্য আসবে।”

তিনি বলেন, “প্রায় পাঁচ বছর আগে যখন এখানে এসেছিলাম তখন শুধুমাত্র একটা বাড়ি ছিল। আজ এত অত্যাধুনিক পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে, এত ছাত্র-ছাত্রী এখানে পড়াশোনা করছে, এটা সত্যিই ভালোলাগার, গর্ব করার।” 

তিনি বলেন, “দেশের প্রায় সব বেসরকারি মেডিকেল কলেজ আমি ঘুরেছি। কিন্তু হাতে গোনা একটা-দুটো ছাড়া এত ভালো মেডিকেল কলেজ, এত ভাল পরিকাঠামো, এত অভিজ্ঞ অধ্যাপক – আমি কোথাও দেখিনি।” যেভাবে আন্তর্জাতিক মানের পরিকাঠামো নিয়ে এই হাসপাতাল গড়ে উঠছে তারও তিনি ভূয়সী প্রশংসা করেন। 

দিল্লীর স্যার গঙ্গারাম হসপিটাল এর কো-ডিরেক্টর তথা এশিয়ার বিখ্যাত লিভার রোগ ও লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুরেশ সিংভি বলেন, "আমি কালকে এখানে রোগী দেখার জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলাম। এখানে আমি যে পরিকাঠামো দেখেছি, তা নিঃসন্দেহে হাই-ক্লাস।” 

তিনি আরও বলেন, “আমি শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজের যে উন্নতির কথা শুনছি, তা আমাকে প্রতিমুহূর্তে মুগ্ধ করছে। আমি আগামী দিনে আবারও এখানে আসতে বিশেষভাবে ইচ্ছুক। যখনই সময় হবে, আমি এখানে আসবো।”

এদিন প্রফেসর ডাঃ কে প্রভাকর রেড্ডি ও এশিয়ার বিখ্যাত লিভার রোগ ও লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুরেশ সিংভি ছাত্র-ছাত্রীদের প্রায় এক ঘন্টার উপর মুখোমুখি কথা বলে তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন। 

প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে সরকারের সহযোগিতায় ও সহমত ভিত্তিতে মহিলাদের entrepreneur করে তাদের পরিচালনায় “শান্তিনিকেতন স্বাস্থ্য উপনগরী” –গঠন করা হবে। এক্ষেত্রে facilitator হিসেবে শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কাজ করবে। এই আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্য উপনগরীর অংশ হিসাবে এখানে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অত্যাধুনিক স্পোর্টস একাডেমী, কালচারাল একাডেমী সহ রিক্রিয়েশন ক্লাব তৈরী করা হবে। আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে এই পুরো প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে।

মহিলাদের অর্থনৈতিক ভাবে স্বনির্ভর করতে মহিলাদের entrepreneur বা উদ্যোক্তা করে সামাজিক উন্নয়ন করতে বীরভূম জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসন একযোগে শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক বলে জানালেন বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি ফায়েজুল হক ওরফে কাজল শেখ।

আজ রবিবার সকালে শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজে অনুষ্ঠিত হওয়া SMC MedExpo 2025, ছাত্রছাত্রীদের জন্য বাৎসরিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ESTELLA 2K25 মঞ্চে প্রস্তাবিত মহিলা উদ্যোক্তা (entrepreneur) কর্মসূচীর শিলান্যাস করে এই কথা ঘোষণা করেন কাজল শেখ।

এই সভায় উপস্থিত ছিলেন শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সভাপতি মলয় পীট, অল ইন্ডিয়া ইমাম অ্যাসোসিয়েশানের সভাপতি মোঃ বাকিবিল্লাহ মোল্লা, বিশিষ্ট স্বাস্থ্য-শিল্পপতি সঞ্জয় মুখার্জি, তাহের শেখ সহ আরও অনেকে। 

উদ্বোধনী ভাষণে কাজল শেখ বলেন, “একটা সময় যেখানে বোমের আওয়াজে মানুষের ঘুম ভাঙত, সেখানে (নানুর বিধানসভা) আজ শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ তৈরি হয়ে এলাকায় উন্নতি ঘটেছে। অবস্থারও পরিবর্তন ঘটেছে। আগামীদিনে আরো উন্নতি হবে। এই জন্য এর সভাপতি মলয় পীটকে অভিনন্দন ও কুর্নিশ জানাই। বীরভূম জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসন থেকে তাকে ও তার উন্নয়নের কাজকে সব রকম সহযোগিতা করা হবে।”

তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মহিলাদের জন্য অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত করেছেন। এখানেও দেখলাম মহিলাদের অর্থনৈতিক ভাবে স্বনির্ভর করতে মলয় বাবু মহিলাদের উদ্যোক্তা করে সামাজিক উন্নয়ন করার যে সময় উপযোগী ভাবনা নিয়েছে সেক্ষেত্রেও বীরভূম জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসন একযোগে কাজ করতে ইচ্ছুক। আমি কথা দিচ্ছি, আপনারা এগিয়ে যান। বীরভূম জেলাপরিষদ আপনার পাশে আছে। সোনার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আপনার পাশে থাকবেন।” 

এরপর তিনি শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজে অনুষ্ঠিত হওয়া SMC MedExpo 2025 ঘুরে দেখেন। সেখান তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বইমেলা, শিল্পমেলা দেখেছি, কিন্তু এমন স্বাস্থ্য সরঞ্জামের মেলা আগে কখনো দেখি নি।”

কাজল শেখ বলেন, “২০১১ সালের পর থেকে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে রাজ্য সরকার। এই সব কর্মসূচী তখনই সফল হবে যখন রাজ্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা একযোগে এগিয়ে আসবে। এভাবেই সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব।”

তিনি আরো বলেন, “মলয় পীট, যিনি শান্তিনিকেতন মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতাল গড়ে তুলেছেন তিনি রাজ্যের আড়াই হাজার নার্সিংহোম ও বেসরকারী হাসপাতালকে এক জায়গায় আনার উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ২০২৬ সালের মধ্যে এমন পরিকাঠামো ও ব্যবস্থা তৈরি করা হবে যাতে করে জেলার কোন মুমূর্ষু রোগীকে চিকিৎসার জন্য তার জেলার বাইরে বা রাজ্যের বাইরে যেতে না হয়। আমার স্থির বিশ্বাস এটা সম্ভব হবেই।”

এদিন শান্তিনিকেতন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল পরিদর্শন করেন তিনি। সেখানকার স্বাস্থ্য পরিষেবার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।

Comments

Popular posts from this blog

মহিলা শিক্ষার্থীদের জন্য

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সফলতা

কলকাতা হাইকোটের নির্দেশ অনুযায়ী ....