জাতীয় নির্বাচন কমিশনের উদ্যোকে কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলার সাংবাদিকদের নিয়ে এক কর্মশালার

মৃণালকান্তি সরকার- বৃহস্পাতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, সন্দেশখালি ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সিইও অফিস নয়, নিজেদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই যোগাড় করে ফেলেছিল নির্বাচন কমিশন সন্দেশখালীর পুঙ্খানুপুঙ্খ সব তথ্য ভিডিওগ্রাফি সমেত।

 নির্বাচন কমিশন এক নির্দেশিকা জারি করল তাতে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা কোন পর্যায়ে গিয়েছে তার পরিষ্কার একটা ছবি ধরা পড়ছে। কারণ, নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে এই প্রথমবার নির্বাচনী নির্ঘন্ট প্রকাশ হওয়ার এতো আগে থেকে মিডিয়া মনিটরিং শুরু করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন।

বৈদ্যুতিন মাধ্যম, খবরের কাগজ এবং ডিজিট্যাল মিডিয়ায় রাজ্যে প্রতিদিন কি খবর হচ্ছে নির্বাচন কে কেন্দ্র করে তার সবিস্তারের রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। 

কলকাতা উত্তর এবং কলকাতা দক্ষিণ সহ রাজ্যের মোট ২৪ টি জেলার রিপোর্ট পাঠানো শুরু হয়েছে। কেবলমাত্র তাই নয় রীতিমতো জাতীয় নির্বাচন কমিশন নির্দিষ্ট করে দিয়েছে মোট সাতটি পয়েন্ট।

যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি,ফেক নিউজ সহ অন্যান্য সবকিছুই। পাশাপাশি এরই মধ্যে আছে রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ববৃন্দ কখন কোথায় কে কি বলছে সেটাও বিস্তারিতভাবে পাঠাতে হবে নির্বাচন কমিশনে। নির্বাচন কমিশনের কাছে এর আগে এতদিন এইসব রিপোর্ট পাঠাতে হতো নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ হওয়ার পর থেকে। 

কিন্তু এই প্রথমবার নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে এতো আগে থেকেই এবার জাতীয় নির্বাচন কমিশন রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে এবং সম্পূর্ণ রিপোর্ট হাতে নিয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জাতীয় নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর।

 

নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ ইতিমধ্যেই অন্ধ্রপ্রদেশে রয়েছে।  আগামী ৪ঠা মার্চ এই রাজ্যে আসতে চলেছে নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ। যদিও রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তর থেকে ইতিমধ্যেই সব জেলা থেকে রিপোর্ট নেওয়া শুরু করেছে। 


কোন কোন এলাকায় উত্তেজনাপ্রবণ বুধ রয়েছে পাশাপাশি তার জন্য এখন থেকেই জেলা নির্বাচনে আধিকারিকরা সে ক্ষেত্রে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সেই সব কিছুই। অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচন কমিশনে এবার বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে জামিন অযোগ্য ধারায় যারা এখনো পর্যন্ত এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে তাঁদের কে নিজেদের আওতার মধ্যে রাখতে। নির্বাচনী নির্ঘণ্ট প্রকাশ হওয়ার পর আর কোন ভাবেই যেন তাঁরা বাইরে থাকতে না পারে সে বিষয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকসহ প্রত্যেক জেলার জেলা নির্বাচনী আধিকারিকদের কড়া নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ৮০ হাজারের বেশি বুথ রয়েছে যার মধ্যে °৪৭ শতাংশ বুথ শ্যাডোজোনের মধ্যে রয়েছে। যেখানে এখনও পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।

জাতীয় নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর যে কোন মূল্যে ১০০ শতাংশ বুথেই এবার ওয়েব কাস্টিং করা হতে পারে। সম্প্রতি রাজ্যে ঘটে যাওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে তারপর জাতীয় নির্বাচন কমিশন আর কোনোভাবেই একটি চুলও খামতি রাখতে চাইছে না তাঁদের কোন কাজে। ফলে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের এইসব পদক্ষেপ গুলি এখন থেকেই বুঝিয়ে দিচ্ছে আসন্ন লোকসভা নির্বাচন এই রাজ্যে এবার কোন রূপ নিতে চলেছে। আর সেই জায়গা থেকেই এখন দেখার জাতীয় নির্বাচন কমিশন কি? তাদের নিজেদের যে ভূমিকা সেটা পালন করতে সক্ষম হবে নাকি নির্বাচনে রাজ্যে সেই হিংসার ছবি ধরা পড়বে প্রতিবারের মতোই। আর এই নিয়েই আগামী ২৪ শে ফেব্রুয়ারি রাজ্যের সব জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের নিয়ে বিশেষ জরুরী বৈঠক ডেকেছেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব। যদিও এটা নতুন কিছু নয়, তার কারণ প্রত্যেকবার নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্জ আসার আগে এক প্রশস্ত সব দিকের কাজ সেরে ফেলার জন্যই এই প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে।

কিন্তু আগামী আটাশে ফেব্রুয়ারি কলকাতা উত্তর, কলকাতা দক্ষিণ, উত্তর ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা কে নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করতে চলেছেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব। সব জেলার সঙ্গে বৈঠক করার পরেও ফের কেন মূলত এই চারটি জেলার সঙ্গে আবারো বৈঠক এই নিয়েই উঠছে নতুন করে প্রশ্ন। তার কারণ একটাই, যতদিন এগিয়ে আসে নির্বাচনের ঠিক যেন ততটাই উত্তাপ বাড়ছে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়। সন্দেশখালীর ঘটনার পর রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি থেকে শুরু করে সামগ্রিক পরিস্থিতি যে একেবারে ব্যাহত হয়ে পড়েছে তা কমিশনের এক কর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) খুব পরিষ্কার ভাষায় জানিয়েছেন।

তিনি জানান, আগের রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সামগ্রিক পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করার পরেই নির্বাচনের পথে হাঁটবে কমিশন। আর এই কারণেই নির্ঘন্ট প্রকাশ হওয়ার আগে রাজ্যে আসতে চলেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সামনের সপ্তাহ থেকেই রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছড়িয়ে পড়বে বিভিন্ন এলাকায়। সাধারণ মানুষের মধ্যে মনোবল বাড়ানো থেকে শুরু করে আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং নিজের ভোট নিজে যাতে দিতে পারে সকলে সে কাজেই ব্যবহার করা হবে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে এমনটাই খবর জাতীয় নির্বাচন কমিশনসূত্রে। কিন্তু সব জেলার সঙ্গে বৈঠক করার পরেও দুই কলকাতা এবং দুই চব্বিশ পরগনা কে নিয়ে বৈঠক রীতিমতো নির্বাচন কমিশনের কপালের ভাজ যে চওড়া হচ্ছে তার দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে সকলের কাছে। যদিও কমিশন এখনো পর্যন্ত পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক নয় ভোট করানোর জন্য সে কথা যেমন স্বীকার করে নিচ্ছে ঠিক পাশাপাশি কমিশন এটাও জানাচ্ছে যে কোন মূল্যে মানুষের ভোটাধিকারকে সুনিশ্চিত করার জন্য জাতীয় নির্বাচন কমিশন সব রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

Comments

Popular posts from this blog

মহিলা শিক্ষার্থীদের জন্য

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সফলতা

কলকাতা হাইকোটের নির্দেশ অনুযায়ী ....