বিশ্ববিদ্যালয়টি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চশিক্ষা দপ্তরের হুকুমের দাস হয়ে উঠতে

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ সোমবার, ১৫ই মে, ২০২৩’ প্রেস ক্লাব কলকাতা, অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন CUTA এর পক্ষ থেকে সেক্রেটারি প্রফেসর সনাতন চ্যাটার্জি (২) প্রফেসর মহালয়া চ্যাটার্জী (৩) ফার্মার প্রেসিডেন্ট  প্রফেসর পার্থিবা বাসু (৪) ভাইস প্রেসিডেন্ট সীতানাথ মজুমদার। (৫) জয়েন সেক্রেটারি প্রফেসর গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়।

১৮৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রিটিশ ভারতের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এখন স্নাতক প্রোগ্রামের অধীনে ১৫০টিরও বেশি কলেজ রয়েছে এবং ৬০টিরও বেশি শাখায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হয়ে থাকে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের একাডেমিক বিশ্বের প্রতিটি কোণে খুঁজে পাওয়া যাবে এবং পশ্চিমবঙ্গে এমন কোনো পরিবার খুঁজে পাওয়া শক্ত, যার আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই।

পশ্চিমবঙ্গের রাজা-সহায়তাপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এবং বিশেষ করে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি, আমাদের এমনই অসহায় অবস্থার শিকার করেছে যে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (CUTA) এর কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে সাধারণ জনগণকে জানানো ছাড়া আর কোনও বিকল্প পথ নেই।

অক্টোবর ২০২২ সাল থেকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্য নেই এবং ২০ এপ্রিল, ২০১৩ থেকে একজন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যও নেই। দীর্ঘ বিলম্বের পরে, সম্মাননীয় আচার্য (পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল) অবশেষে উপাচার্য নিয়োগের জন্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করার অধ্যাদেশে তাঁর সম্মতি দিয়েছেন। আমরা সম্মাননীয় আচার্য মহোদয়কেও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যদের কাছ থেকে সাপ্তাহিক প্রতিবেদন দাবি করতে দেখেছি। রাজ্যপাল ও সরকারের মধ্যে এই দ্বন্দ্বের ফলে পশ্চিমবঙ্গে শুধুমাত্র একটি নিয়মতান্ত্রিক নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে।

২০১১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় আইন (সংশোধনী) এবং ২০১৭ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালের এবং কলেজ

(প্রশাসনিক ও নিয়ন্ত্রণ) আইন দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন এবং শিক্ষা প্রদানের সমস্ত ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন

কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী পরিষদ, সিন্ডিকেটে শিক্ষকদের নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই, এমনকি একটি সভায় ন্যূনতম কোরাম গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্যও নেই। তবু এই পরিষদ এখনও অ্যাডহক পদ্ধতিতে তার রেগুলেশনগুলি তৈরি করে চলেছে। এই পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরিসরের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা বন্ধ করে দিয়েছে, যেমনটি উপরে উল্লিখিত আইনের উদ্দেশ্য ছিল এবং এখন শুধুমাত্র বিশেষ বিশেষ পদাধিকারী সদস্যদের নিয়ে গঠিত এই পরিষদ। সেনেট, যেখানে বিভাগীয় প্রধানরা সদস্য, খুব কমই অনুষ্ঠিত হয় সেই সভা, এবং লজ্জাজনকভাবে প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা পরীক্ষা পদ্ধতির কাঠামোগত পরিবর্তন সম্পর্কে মিডিয়। রিপোর্টগুলি শিক্ষকদের কাছে প্রাপ্তব্য তথ্যের একমাত্র উৎস।

উপরে উল্লিখিত আইনে বাধ্যতামূলকভাবে বিভিন্ন অনুষদে ডিনদের কোনো আনুষ্ঠানিক নিয়োগ হচ্ছে না এবং ान ডিনরা আংশিক সময়ের ভারপ্রাপ্ত', অবস্থার ভিত্তিতে কাজ করছেন এবং তাঁদের মেয়াদ নির্বিচারে বর্ধিত বা সমাপ্ত করা হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে শিক্ষক নিয়োগের ক্রমবর্ধমান প্রবণতাও লক্ষ্য করেছি। এরফলে ইতিমধ্যেই পাঠবিভাগগুলিতে শিক্ষকের আকাল পাঠদানে ক্ষতি করছে এবং প্রশাসনিক পদে অকস্মাৎ নিযুক্ত শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

অধ্যাপক (প্রফেসর) পদে শিক্ষকদের পদোন্নতি দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে কারণ মূল্যায়ন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করানা জন্য আবশ্যিকভাবে প্রয়োজনীয় সম্মাননীয় আচার্যের মনোনীত ব্যক্তির তালিকা সম্মাননীয় আচার্যের কার্যালয় প্রকাশ করেনি।

গত পাঁচ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও শিক্ষক নিয়োগ হয়নি বা রাজ্য সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো উন্ন করার জন্য তহবিল প্রদান করেনি, তবুও বিশ্ববিদ্যালয়টি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চশিক্ষা দপ্তরের হুকুমের দাস হয়ে উঠতে আগ্রহী। সম্প্রতি প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রস্তাবিত কাঠামো বাস্তবায়নের জন্য পদ বৃদ্ধি করা না গেলেও শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ ও পরিকাঠামোর ব্যাপক বৃদ্ধি ও পুনর্গঠন প্রয়োজন।

এইসব তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ নিয়ে দায়বদ্ধতার কারণে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। পশ্চিমবঙ্গের সমগ্র জনগণের কাছে, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সর্বদাই আস্থার স্তম্ভ এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি আলোকবর্তিকা স্বরূপ। আমাদের প্রাচীনতম ও অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ক্রমশ ক্ষয় অবিলম্বে বন্ধ না হলে, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আমাদের রাজ্যের সরকারী অনুদানে পোষিত উচ্চশিক্ষা অদূর ভবিষ্যতে ধ্বংস হয়ে যাবে। আমরা আমাদের সম্মাননীয় চ্যান্সেলর হিসাবে রাজ্যপাল এবং রাজ্য সরকারের কাছে তাদের মতভেদ ও দ্বন্দ্ব থেকে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্তি দেওয়ার জন্য আবেদন জানাই এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা রক্ষার জন্য শিক্ষার প্রতি দায়বদ্ধ ও অধিকারী। সমস্ত ব্যক্তি এবং সাধারণ জনগণকে একত্রিত হওয়ার এবং এই দীর্ঘস্থায়ী অচলাবস্থার দ্রুত সমাধান করার দাবি উত্থাপন করার জন্য অনুরোধ করি।

(কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি রেজি. S/14503 of 1974-75)



Comments

Popular posts from this blog

মহিলা শিক্ষার্থীদের জন্য

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সফলতা

কলকাতা হাইকোটের নির্দেশ অনুযায়ী ....