কুম্ভ মেলা - একটা বিশ্বাসের জায়গা ???, না একটা বোকা বানানোর জায়গা ???

প্রশ্নটা এলো প্রদীপ মুখার্জির কথা শুনে, যিনি নিজেকে পরমাত্মার সন্দেশ বাহক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। উনি বললেন যে পরমাত্মার হিসেবে, স্বয়ং ভগবান মানুষকে বোকা বানাচ্ছে, সমস্ত ধর্ম এবং আধ্যাত্ম্যের মধ্যে দিয়ে। উনি বললেন যে মানুষ যাকে পুজো করে, সেই ভগবানই মানুষের সমস্ত দুঃখ এবং কষ্টের জন্য দায়ী।

মানুষ কুম্ভ মেলায় দুটো জিনিস করতে যায়, তার পাপ থেকে মুক্তি পেতে এবং মোক্ষ লাভ করতে। হিন্দু ধর্ম ছাড়া বাকি সমস্ত ধর্মের লোকেরা কি মুক্তি কিংবা মোক্ষ চায় না? যদি কুম্ভ সত্যি হয়, তাহলে তার ব্যাপারে সমস্ত ধর্মের মধ্যে কেন লেখা হয়নি। সমস্ত ধর্ম তো একটাই ভগবানকে পূজা করে।

কতগুলো ধর্মের মধ্যে বলা হয়েছে যে মানুষকে বার বার জন্ম নিতে হয়, এবং সেই জন্য মোক্ষ তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অন্য ধর্মের মধ্যে বলা হয়েছে যে মানুষের একটাই জন্ম, তাই তাদের কাছে মোক্ষ কোন দাম নেই। তাহলে আসল সত্যিটা কি? একটা জন্ম, না অনেক জন্ম? 

হিন্দুরা ভগবানকে মহাদেব বলেন, মুসলমানরা আল্লাহ, ক্রিশ্চিয়ানরা ফাদার, ইহুদিরা যিহোবা, পার্সীরা আহুরা মাজদা। অনেক নাম, একই পুরুষ। একই পুরুষ, আলাদা আলাদা বার্তা সমস্ত মানুষকে কেন দিলো? কি তার উদ্দেশ্য?

প্রত্যেক ধর্মে, মানুষ তাদের বিশ্বাসের উপর চলে, এবং সেই বিশ্বাসটা ওরা কতগুলো বইয়ের মধ্যে থেকে পায়। এই বইগুলো, ভগবান কতগুলো মানুষের মধ্যে দিয়ে লিখিয়েছেন। এই বইগুলো তদন্ত করার কোন উপায় নেই, এবং এগুলোকে অন্ধের মত মেনে নিতে হবে, বিশ্বাস করতে হবে।

এই ক্ষেত্রে, প্রশ্নটা হল যে মানুষ কোন প্রমাণ ছাড়া, কোন কিছুকে বিশ্বাস কেন করে? সেটার উত্তর হল সম্মোহন। মানুষকে ভগবান এমন ভাবে সম্মোহন করে রেখেছে, যে তাকে তার ধর্মগ্রন্থের মধ্যে লেখা জিনিস কে বিশ্বাস করতে বাধ্য হবে, এবং সেই বিশ্বাসের হিসেবে কর্ম করতে হবে। 

প্রদীপ মুখার্জি, যিনি পর্মাতমার সন্দেশ বাহক, বলেছেন যে মোক্ষ এবং মুক্তি লাভ, কুম্ভ গিয়ে সম্ভব নয়, কোন রকমের পুজো করে সম্ভব নয়, মন্ত্র করে সম্ভব নয়, ধ্যান করে সম্ভব নয়, গুরু কৃপা কিংবা দেবী কৃপাতেও সম্ভব নয়। এটা একমাত্র সম্ভব ঈশ্বর কৃপায়। 

কিন্তু ঈশ্বর কৃপা মানুষ কি করে পেতে পারে? মুশকিল হল যে মানুষের পক্ষে এমন কিছু করা সম্ভব নয় এই ঈশ্বর কৃপা পাওয়ার জন্য, কেন কি ঈশ্বর, বিধাতার দেওয়া নির্দেশের উপর কাজ করছেন। মানুষের বিধাতা হলো তার আত্মা। আত্মা, মানুষের জন্মের আগে এটা নির্ধারিত করে নেয় যে এই মানুষটার এই জন্মে, মুক্তি কিংবা মোক্ষ, হবে, কি হবে না। 

এই জ্ঞান গুলো, ভগবান মানুষের কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছেন। ভগবান মানুষকে, সমস্ত ধর্মের মধ্যে, পূজা করার জন্য বাধ্য করেছেন। ভগবান, সম্মোহন এবং ধর্ম দিয়ে মানুষকে পুরোপুরি বেঁধে রেখেছেন, যাতে, যখন পরমাত্মা মানুষের কাছে আসবেন, সেই সময় মানুষ পর্মাতমার কাছে কখনো যাবে না। 

পরমাত্মা মানুষকে বলেন যে তুমি সত্যি যদি মুক্তি এবং মোক্ষ চাও, তাহলে এই ছবিটার দিকে এক মুহূর্তের জন্য খালি তাকিয়ে নিও। তোমাকে আর কিছু করতে হবে না, তোমাকে কোথাও যেতে হবে না, তোমাকে কারোর সাথে জুটতে হবে না, তোমাকে কারোর সেবা করতে হবে না। এই জীবনটা তোমার শেষ জীবন হবে। তোমার সমস্ত পাপ এবং কর্ম এই জীবনেই কেটে যাবে।

প্রদীপ মুখার্জি বলেন যে পরমাত্মার কথায় কাউকে বিশ্বাস করার কোন দরকার নেই, কোন বিবাদ করার দরকার নেই যে এটা সত্যি কি মিথ্যে, প্রমাণ চাওয়ার কোন দরকার নেই, কেন না মানুষ যেই সম্মোহনের মধ্যে আছে, তার মধ্যে এর কোন প্রমাণ দেওয়া যায় না।

Comments

Popular posts from this blog

মহিলা শিক্ষার্থীদের জন্য

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সফলতা

'দরবারী পদাবলী'-তে গুরু-শিষ্য পরম্পরার অনবদ্য নজির কলকাতায়