হতাশা ও নৈরাজ্যের সুর ধ্বনিত যখন এই বর্তমান সমাজে

বেবি চক্রবর্ত্তীঃ আজকের দিনে আমরা ভারত তথা সমগ্র জগতের ইতিহাসে এক সংকটকালে বাস করছি | হতাশা এবং নৈরাশ্যের সুর ধ্বনিত হচ্ছে দিকে দিকে | কিন্তু মানুষ নিঃশ্বাস হারানোর অর্থ মৃত্যু ,মানুষ নিজের ওপর বিশ্বাস না থাকার অর্থ মনুষ্যত্বের অপমান | এই নেতিমূলক চিন্তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বামী বিবেকানন্দ আমাদের আধ্যাত্মিক সম্পদের উপর নির্ভর করার জন্য অনুপ্ররণা দিয়েছেন |

স্বীমী বিবেকানন্দ ভগিনী নিবেদিতাকে একবার বলেছিলেন, "যতই বয়স বাড়ছে ততই মনে হয় , পৌরুষ বা বীরত্বের উপরই সব কিছু নির্ভর করে | এটিই আমার নূতন বাণী |"

 "পৌরুষ" ---- এই কথাটির মাধ্যমে স্বামীজী অনেক বড় কথা বোঝাতে চেয়েছেন, শরীরের কর্মবল বা দুর্বল শক্তি | মনুষ্যত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে যে আত্মা বা দিব্য স্ফুলিঙ্গসদা বিদ্যমান --- সে বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা আনতে চেয়েছেন স্বামীজী | জীবনের প্রতিটি স্পন্দনে মানুষ যাতে তার এই মহিমা প্রকাশ করতে পারে তার জন্য সাহায্য করতে চেয়েছেন |

এই বাণী এমন প্রয়োজন আর কখনো অনুভূত হয়নি |আমাদের সামনে আজ নানা জটিল সমস্যা| এর হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একমাত্র উপায় | এই পরিত্রাণ শুধু  ভগবত গীতায় আছে বাইবেলে ও আছে, কোরানে ও আছে সুতরাং আমরা এখানে বলতেই পরি যে সকল ধর্মের মূল কথা পরিত্রাণ অর্থাৎ মুক্তির পথ |  বাইবেল বলছে যীশু মুক্তির পথ দেখিয়েছে বাইবেল ধর্ম গ্রন্থের মাধ্যমে , কোরান বলছে হজরত মহম্মদ কোরান ধমগ্রন্থের মধ্যে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন | বৌদ্ধ ধর্মে গৌতম বৌদ্ধ অষ্টাঙ্গিক মার্গের মাধ্যমে মুক্তির পথ দেখিয়েছন তাঁর চেনত ভাগের মাধ্য দিয়ে , চেতন অর্থাৎ জ্ঞানের মাধ্যমে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন, গীতাতে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ  পরিত্রাণ অর্থাৎ মুক্তির পথ দেখিয়েছেন ---- " তুমি এজগতে কিছু নিয়েও আসনি আর কিছু নিয়েও যাবেনা | জগতে যা কিছু দেখছো কোনো কিছু তোমার না, কিছু সময়ের শুধু উপলব্ধি মাত্র | এখানেই আমরা বুঝতে পারি যে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ তার ভিন্ন রখম ব্যাখ্যা দিয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে নিজের জায়গায় | কিন্তু সকল ধর্মের মূল বিষয় এক |  পরিত্রাণ অর্থাৎ মুক্তি |  জীবন বোধের মুক্তি বা পথ | তা আন্তনির্হিত উপলব্ধি এবং তার বিকাশ-সাধন | এর দ্বারাই আমরা যথার্থ মানুষ হতে পারি |

আমরা এখন দেশ গঠনের বিশাল কর্মে নিযুক্ত | স্বামী বিবেকানন্দ যথার্থই বলেছেন যে, মানুষ গড়ার সাধনের ভিত্তিভূমির উপর দেশ গঠন করতে হবে | আমরা প্রায়ই আমাদের বস্তুগত দৈন্যের কথা বলি | কিন্তু সত্যিকারের দৈন্য আমাদের বস্তুগত নয় | এ দীনতা সংহত চরিত্রের নর-নারীর | দেশ গঠিত হয় মানুষ দিয়ে ---- যে মানুষের অন্তরে আত্মমর্যাদা -বোধ আছে |

আজকাল ভারতের যুবসমাজ ভারতের পুনর্গঠনে খুবই উৎসাহী | তারা এক মহান ভারতের স্বপ্ন দেখে | কিন্তু কিভাবে এ কাজ করতে হবে সেটিই প্রশ্ন | ব্রিটিশ রাজত্বে যে দাসসুলভ মনোবৃত্তি আমাদের মধ্যে ঢুকে গেছে --- যার ফলে বিদেশী ভাব এবং আদর্শমাত্রই অতি উপাদেয় এবং যা কিছু ভারতীয় সবই হেয় --- এ ভাব থেকে আমরা এখনো মুক্ত হতে পারিনি |

ভারতীয়দের মধ্যে ভারতমাতার জন্য দেশপ্রেমের উৎসাহ জাগাতে স্বামী বিবেকানন্দ মর্মস্পর্শী ভাষায় লেখেন -----

"হে ভারত, ভুলিও না ----তোমার নারী জাতির আদর্শ সীতা , সাবিত্রী, দময়ন্তী, ভুলিও না তোমার বিবাহ, তোমার ধন, তোমার জীবন ইন্দ্রিয় -সুখের | ---নিজের ব্যাক্তিগত সুখের জন্য নহে; ভুলিও না তুমি জন্ম হইতেই 'মায়ের জন্য বলি প্রদত্ত; ---ভুলিও না --- নীচ জাতি, মূর্খ, দারিদ্র, অজ্ঞ, মুচি মেথর,তোমার রক্ত,তোমার ভাই|"

Comments

Popular posts from this blog

মহিলা শিক্ষার্থীদের জন্য

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সফলতা

'দরবারী পদাবলী'-তে গুরু-শিষ্য পরম্পরার অনবদ্য নজির কলকাতায়