দুর্নীতি দেখে চোখ কপালে

নিজস্ব প্রতিনিধিঃকলকাতাশুধু একটা জেলাতেই বাদ চল্লিশ হাজার নাম। আবাস যোজনায় ‘দুর্নীতি’ দেখে চোখ কপালে আধিকারিকদের। আবাস যোজনা নিয়ে বিক্ষোভ মালদায়। আবাস যোজনার তালিকা যাচাইয়ের প্রথম পর্যায়েই বাদ পড়ল চল্লিশ হাজার উপভোক্তার নাম। এই পরিসংখ্যান শুধু মালদা জেলার। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় দুর্নীতি, স্বজনপোষন ও অনিয়মের বহর দেখে তাজ্জব জেলার শীর্ষস্তরের আধিকারিকরাও। শুধু পাকা বা দোতলা-তিনতলা বাড়িই নয়, কোটিপতি ব্যবসায়ীর পরিবারের কোনও না কোনও সদস্য আবাস যোজনার উপভোক্তা হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক থেকে সরকারি কর্মচারী, বড় ব্যবসায়ীর নামও ঢুকেছে তালিকায়। আর স্বজনপোষণ? এক শ্রেণির কর্তাদের সৌজন্যে জনপ্রতিনিধিদের নামও সেই তালিকাভুক্ত বলে বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছেন। কোথাও গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়ির একাধিক সদস্য, কোথাও সমিতি বা পঞ্চায়েত সদস্য নিজেই উপভোক্তা। ইংরেজবাজারে উপভোক্তা তালিকায় ৫৩ জন পঞ্চায়েত সদস্য। বৈষ্ণবনগরে ৩৮ জন জনপ্রতিনিধির নাম উপভোক্তা তালিকায়। সেই সঙ্গে মানিকচক, মোথাবাড়ি, গাজোল, রতুয়া, চাঁচোল, হরিশচন্দ্রপুর-সহ মালদা জেলার ১৫টি ব্লকে অন্তত ৮০০ জন জনপ্রতিনিধির নাম আবাস তালিকা থেকে এই সমীক্ষায় মুছে ফেলতে হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

মালদার জেলার সরকারি তথ্য বলছে, জেলার মোট তালিকাভুক্তদের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের ‘আবাস প্লাস’ সমীক্ষায় ২৫ শতাংশ নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ পড়ার সংখ্যাটা প্রায় চল্লিশ হাজার। মালদার ১৫টি ব্লকে মোট ১ লক্ষ ৬৭ হাজার উপভোক্তার নাম ছিল। প্রথম পর্যায়ের সমীক্ষা শেষে প্রায় ১ লক্ষ ৪৫ নাম আপাতত তালিকায় রয়েছে। তবে এই তালিকাও চূড়ান্ত নয় বলে জেলা প্রশাসন সূত্র দাবি করেছে। মালদা জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, এরপরেও তালিকাটি চূড়ান্ত পর্যায়ে যাচাই করা হবে। প্রত্যেকটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রত্যেকটি সংসদে প্রকাশ্যে গ্রামসভা বসবে। সেই গ্রামসভায় সংসদের উপভোক্তাদের তালিকা প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হবে। কারও নামে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সেই সভায় গ্রামবাসীরা তা তুলে ধরবেন। সেখানেও নাম বাদ যেতে পারে। গ্রামসভার অনুমোদন সাপেক্ষে আবাস যোজনায় উপভোক্তাদের তালিকা চূড়ান্ত হবে। গোটা জেলাজুড়েই এই কর্মকাণ্ড চলবে বলে প্রশাসনের ওই সূত্র জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় উপভোক্তাদের নাম যাচাই ও সমীক্ষার নির্দেশ দেয় রাজ্য সরকার। যাবেন কি যাবেন না, এই দোলাচলের প্রভাব অবশ্য সেভাবে পড়েনি মালদা জেলায়। ‘সমীক্ষায় যাবেন না’ বলে রতুয়া, মানিকচক, চাঁচোল-সহ কয়েকটি ব্লকে আশাকর্মীদের একাংশ বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। পরে জেলাশাসক নীতিন সিঙ্ঘানিয়া হস্তক্ষেপে সেই ক্ষোভ প্রশমিত হয়ে যায়। এই ‘আবাস প্লাস’ সমীক্ষা করতে বাড়ি বাড়ি যেতে হয়েছে আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের। মালদা জেলার ১৫টি ব্লকেই আশাকর্মীরা প্রাথমিক সমীক্ষার কাজ শেষ করেছেন। আশাকর্মীদের সঙ্গে গ্রামে গিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে সমীক্ষার কাজে হাত লাগিয়েছেন জেলাশাসক নীতিন সিঙ্ঘানিয়া-সহ জেলার পদস্থ আধিকারিকরা। সঙ্গে থাকতে হয়েছে বিডিও এবং ব্লক প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মীদেরও।

Comments

Popular posts from this blog

মহিলা শিক্ষার্থীদের জন্য

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সফলতা

'দরবারী পদাবলী'-তে গুরু-শিষ্য পরম্পরার অনবদ্য নজির কলকাতায়